সব মহাসড়ক হবে আট লেন

‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১’ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সব মহাসড়ক ছয় লেনে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সেসব মহাসড়ক আট লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে সড়ক ও মহাসড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুহার শূন্যে নামিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে হলে উন্নত ও সহজতর যোগাযোগ ব্যবস্থা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে সরকার। এর অংশ হিসেবে এখন থেকেই যে কোনো মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজের সময় ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১’-এর কথা মাথায় রেখে জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ জন্য সরকারের নেওয়া প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ বাস্তবায়নে সরকারের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে থাকার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, গত ২৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে তাঁর তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (রূপকল্প ২০২১-২০৪১) বাস্তবায়নের চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। খসড়ায় বলা হয়, এই রূপকল্প বাস্তবায়নে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে একযোগে সড়ক, নৌ ও আকাশ পথকে সমান গুরুত্ব দিয়ে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, ভবিষ্যতে সব মহাসড়ককে ছয় লেনে এবং সময়ের প্রয়োজনে আট লেনে উন্নীত করার কাজ এখন থেকেই শুরু করতে হবে। ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিতে ইন্টারনেট, স্কুল, কলেজ, প্রশাসনিক ভবন, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসের সুবিধার মতোই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা অত্যন্ত জরুরি। ফলে শহরের সব সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দিতে হলে সবার আগে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করতে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ ও উন্নয়ন করতে না পারলে রূপকল্প-২০২১-২০৪১ বাস্তবায়ন করা দুরূহ। এ জন্য স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে জাতীয় ও আঞ্চলিক সব মহাসড়ককে আট লেনে উন্নীত করা হবে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি, নিরাপদ সড়ক চাই, বিশ্বব্যাংক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন-২০১৯ অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সড়কে প্রাণহানি বেড়েছে ৮ শতাংশ। এ সময় সড়কে ৫ হাজার ৫১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৮৫৫ জন নিহত হয়েছেন। সরকারি এক গবেষণায় দেখা গেছে, দুর্ঘটনায় একটি কর্মক্ষম ব্যক্তির প্রাণ হারানোর ফলে অর্থনৈতিকভাবে গড় ক্ষতির পরিমাণ ২৪ লাখ ৬২ হাজার ১০৬ টাকা। আর মারাত্মকভাবে আহত হলে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় গড়ে ২০ হাজার ৯৭৭ টাকা। এই আর্থিক ও জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার মাধ্যমে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে সারা দেশে ৬৬টি জাতীয় মহাসড়ক রয়েছে। আঞ্চলিক পর্যায়ে মহাসড়ক রয়েছে ১২১টি। আর জেলা পর্যায়ে প্রধান সড়ক রয়েছে ৬৩৩টি। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক দুটিকে ইতিমধ্যে চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতের কাজ চলছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটিও চার লেনে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে ঢাকার সঙ্গে যুক্ত মহাসড়কগুলোকে আগে ছয় ও আট লেন এবং পরে বিভাগীয় মহাসড়কগুলোকে ছয় ও আট লেনে উন্নীত করা হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান পেতে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) সদস্যদেরকেও প্রস্তাব দেওয়া হবে। আজ হতে শুরু হওয়া বিডিএফের বৈঠকেও এসব বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে মহাসড়কগুলোর নিরাপত্তা ও সব ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে কাজ করছে সরকার। সড়কে মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। এ জন্য সরকারের নেওয়া ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১’ বাস্তবায়নে সরকারের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে থাকার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
error: ধন্যবাদ!